দুনিয়াতে মানুষের আগমন ও জীবনের লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধানের বাস্তবায়ন তথা তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুষ্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন-
‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। অর্থাৎ ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)
সুরা যারিয়াতের এ আয়াতে ওঠে এসেছে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? আর ইবাদতই বা কি?
মানুষ সৃষ্টিতে আল্লাহর ইচ্ছা
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করা। আর ইবাদত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে ও মতে জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনাই হলো মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর নির্দেশ পালনের আমল হলো ইবাদত।
মানুষ যখন কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ পালন করে ইবাদত করতে ব্যর্থ হয়; বুঝতে হবে আল্লাহর বান্দা হিসেবে দুনিয়াতে প্রতিটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্যই তখন ব্যর্থ।
ইবাদতের অর্থ
আরবি ‘ইবাদত’ শব্দটি ‘আব্দ’ শব্দ হতে এসেছে। আর ‘আব্দ’ অর্থ হলো দাস বা গোলাম। সুতরাং ‘লিয়া’বুদুন তথা ইবাদত’ মানে হলো- আল্লাহর গোলামি বা বন্দেগি করা। আর দুনিয়াতে যে ব্যক্তি আল্লাহর গোলামি করবে, ওই ব্যক্তিই সফলকাম।
ইবাদত সম্পর্কে মানুষের ভুল ধরাণা
মানুষ মনে করে কুরআনে নির্দেশ পালনে নামাজ আদায় করা, রোজা ও হজ পালন করা, জাকাত দেয়া, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত করার নামই ইবাদত। না, ইবাদত মানে তা নয়।
আরও পড়ুন: যে কারণে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা জরুরি
কিন্তু মিথ্যা কথা বলে, সুদ-ঘুষে জড়িত থেকে, লোক দেখানো ইবাদত করে, বেহায়ানাপনা, চোগলখুরি, হিংসা-বিদ্বেষ ও মুনাফেকির সঙ্গে লিপ্ত থেকে শুধুমাত্র নামাজ রোজার মতো অন্যান্য আমল করার নাম ইবাদত নয়।
কুরআন সুন্নাহর নিষেধগুলো পরিত্যাগ করে আদেশ পালন হলো ইবাদত তথা বন্দেগি। কারণ ইবাদত হলো আল্লাহ তাআলা হুকুম-আহকাম যথাযথ পালন করা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন-
‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন (নিয়ে এসেছেন), তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর : আয়াত ৭)
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজা অশ্লীল-ফাহেশা তথা খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’
মনের রাখতে হবে
যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে এবং মিথ্যা কথা বলে; জাকাত দেয় আবার সুদ গ্রহণ করে; হজ করে আবার বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়, রোজা পালন করে আবার ঘুষ খায়। এ ব্যক্তির নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ ইত্যাদি ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ ইবাদতের জন্য তাকে সৃষ্টিও করা হয়নি।
আরও পড়ুন: আল্লাহর একত্ববাদের পরিচয়
মানুষ সৃষ্টির মৌলিক ৩টি উদ্দেশ্য
তাহলে মানুষের মাধ্যমে সম্পাদিত ইবাদতের মানে কি? কোন প্রক্রিয়ায় মানুষ আল্লাহ হুকুম-আহকাম পালনের মাধ্যমে ইবাদত করবে তথা মানুষ সৃষ্টির শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে?
মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমনের কারণে যে প্রক্রিয়ায় ইবাদত তথা সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল হবে তা হলো-
>> প্রথমত আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর দাসত্ব স্বীকার করা।
>> আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মেনে তাঁর পরিপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা।
>> সর্ব বিষয়ে আল্লাহ তাআলার সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাকে প্রভূ বলে স্বীকার করা; অন্য কাউকে নয়।
আল্লাহ হুকুম-আহকাম তথা হালালকে হালাল আর হারামকে হারাম বলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে নেয়া।
শুধুমাত্র আল্লাহর সম্মান ও সম্ভ্রমের প্রতি লক্ষ্য রেখে শুধুমাত্র তাঁর সামনে মাথা নত করা বা সিজদা করা।
পরিশেষে...
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যাবতীয় কাজ-কর্মে আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলাই হলো মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। আর তার হুকুম-আহকাম পালনের আমলই হলো ইবাদত। কুরআনে পাকের ঘোষণাও এ রকমই।
আল্লাহর দরবারে মুসলিম উম্মাহর ফরিয়াদ, ‘হে আল্লাহ! আপনাকে রব বা প্রভূ বলে স্বীকার করে, আপনার হুকুম-আহকাম যথাযথ মেনে মানুষ সৃষ্টি হক আদায়ে শুধুমাত্র আপনার সম্মানে সিজদায় মাথা নত করার তাওফিক দান করুন। ইসলামের বিধান পরিপূর্ণ পালনে মুসলিম উম্মাহকে কবুল করুন।
সর্বোপরি দুনিয়ার সব মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তার দাসত্ব বা গোলামি করার জন্য কবুল করুন। আমিন।