তাপ একপ্রকার শক্তি যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি তৈরি করে। তাপগতিবিদ্যা অনুসারে, যখন দুটি বস্তুর মধ্যে প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টিতে আরেকটিতে শক্তি স্থানান্তরিত হয়, তখন প্রথমটি দ্বিতীয়টি অপেক্ষা গরম হয় (অর্থাৎ, একটি অন্যটির চেয়ে বেশি তাপশক্তি অর্জন করে)। আর অন্যভাবে বলা যায়, তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়। তাপগতিবিদ্যার তিনটি সূত্র রয়েছে ।[১]
তাপ ও তাপমাত্রা একই বিষয় নয়। সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে তাপ প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রার পার্থক্যজনিত কারণে বিভিন্ন পদ্ধতিতে, যেমন: পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপশক্তি গমন করে।[২][৩][৪][৫][৬][৭]
ইতিহাস
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, তাপ ক্যালরিক নামে এক প্রকার অতি সূক্ষ্ম তরল বা বায়বীয় পদার্থ। গরম বস্তুতে ক্যালরিক বেশি থাকে এবং শীতল বস্তুতে তা কম থাকে। কোন বস্তুতে ক্যালরিক প্রবেশ করলে তা গরম হয় আর চলে গেলে তা শীতল হয়।কিন্তু ১৭৯৮ সালে বেনজামিন থম্পসন (১৭৫৩-১৮১৪) নামে একজন আমেরিকান বিজ্ঞানী (যিনি পরবর্তীতে কাউন্ট রামফোর্ড নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন) প্রমাণ করেন ক্যালরিক বলে বাস্তবে কিছু নেই। তাপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে গতির। তিনি কামানের নল তৈরির সময় ধাতুর টুকরাকে ড্রিলমেশিন দিয়ে ফুটো করার সময় লক্ষ করেন যে, ছোট্ট ধাতুর টুকরো ছিটকে আসছিল সেগুলো অত্যন্ত উত্তপ্ত। তিনি চিন্তা করেন, ড্রিল চালাতে যে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় হয়েছে তার থেকেই তাপ উদ্ভব হয়। এই যান্ত্রিক শক্তিই ধাতব টুকরাগুলোর অণুগুলোতে গতিশক্তির সঞ্চার করে টুকরাগুলোকে উত্তপ্ত করে।[৮][৯]
তাপ যেভাবে উৎপন্ন হয়
তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর কম্পন ও গতির কারণে সৃষ্ট শক্তি। অর্থাৎ, তাপ পদার্থের অণুগুলোর এলোমেলো গতির ফল। পদার্থের অণুগুলো সবসময় গতিশীল অবস্থায় থাকে। কোনো পদার্থের মোট তাপের পরিমাণ এর মধ্যস্থিত অণুগুলোর মোট গতিশক্তির সমানুপাতিক। কোনো বস্তুতে তাপ প্রদান করা হলে এর অণুগুলোর ছোটাছুটি বৃদ্ধি পায়, ফলে এর গতিশক্তিও বেড়ে যায়। সুতরাং তাপ পদার্থের আণবিক গতির সাথে সম্পর্কিত এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জাগায়।