You can also earn money by answering questions on this site Find out the details

Categories

Sister Links: -- Nishiddho--BDLove24--Cerapatabd ....
50 views
in সাধারণ জ্ঞান by Earnings: 0.071 Usd (66 points)

1 Answer

0 like 0 dislike
দেব রাজবংশ  সমতট অঞ্চলে শাসনকারী রাজবংশ। দেবপর্বত ছিল এ বংশের রাজাদের রাজধানী। ময়নামতীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে দেবপর্বত সম্পর্কে বিশদভাবে জানা যায়। যদিও দেব রাজাদের বেশকিছু উৎকীর্ণলিপি, মুদ্রা ও সীল সম্পর্কে আগেই জানা ছিল, তবুও তাদের শাসনের শ্রেষ্ঠত্ব অসাধারণ উন্নত প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের মাঝে নিহিত। ময়নামতীর অক্ষত প্রাথমিক স্তর (আট-নয় শতক) থেকে এসব উদঘাটিত হয়েছে।
ময়নামতীর প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ মূলত দেব রাজবংশের সময়কে উপস্থাপন করে। দেবদের শাসনকালটি ছিল প্রকৃত অর্থেই শান্তি, সমৃদ্ধি ও মননশীলতার এবং তাদের কালকে বঙ্গ-সমতটের (দক্ষিণপূর্ব বাংলা) ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। শিল্পকলা ও স্থাপত্য ক্ষেত্রে দেবদের ছিল সর্বোৎকৃষ্ট অবদান।

এ রাজবংশ সম্বন্ধে যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার অধিকাংশই এসেছে উৎকীর্ণলিপি থেকে। দেব রাজাদের কমপক্ষে পাঁচটি তাম্রশাসন ও একটি পাথরে উৎকীর্ণলিপি ময়নামতী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি তাম্রশাসনের পাঠোদ্ধার ও প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলি হলো (১) আনন্দদেব-এর ময়নামতী তাম্রশাসন, যার উল্টো পিঠে তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী ভবদেব-এর ভূমিদান প্রত্যয়ন সংযুক্ত রয়েছে; এবং (২) ভবদেব-এর কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি তাম্রশাসন। দেব বংশের বংশানুক্রমিক ধারার সঠিক ও নিশ্চিত তথ্য ছাড়াও এগুলি তাদের সময়ের বেশ আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যা অন্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া যায় না।

তাম্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেব বংশের বংশানুক্রমটি এরূপ (১) শ্রী শান্তিদেব (২) তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী শ্রী বীরদেব, (৩) বীরদেব ও তাঁর স্ত্রী সোমদেবী-র পুত্র ও উত্তরাধিকারী শ্রী আনন্দদেব এবং (৪) আনন্দদেব-এর পুত্র ও দেব বংশের শেষ স্বীকৃত রাজা শ্রী ভবদেব।

প্রথম দলিল থেকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো, বসন্তপুরায় নবস্থাপিত রাজধানী সম্বন্ধে। শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে পুরানো রাজধানী পরিত্যাগ করতে হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। রাজবংশের তৃতীয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা আনন্দদেব তাঁর রাজত্বের ৩৯তম বর্ষে নতুন রাজধানী থেকে দানপত্রটি প্রদান করেন। একই তাম্রশাসনে ভবদেব তাঁর দ্বিতীয় রাজ্যাঙ্কে পুরাতন রাজধানী দেবপর্বত থেকে তাঁর দানপত্রটি প্রদান করেন। স্পষ্টতই, পুরাতন রাজধানীটি অল্পকাল পরেই আনন্দদেব স্বয়ং অথবা তাঁর পুত্র ভবদেব পুনরূদ্ধার করেছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই দেবপর্বতের পেরণাতন বিষয়ার অন্তর্গত ’বেন্দমতী’তে (বর্তমান কোটবাড়ির ‘গন্ধমতী’ এলাকার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে) রত্নত্রয় বিহারের জন্য ভূমি দান করা হয়েছিল।

প্রাপ্ত তথ্য ছয় শতকের প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের সাথে একটি চিত্তাকর্ষক সমকালীনতাও প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দানপত্রগুলি প্রণেতার প্রপিতামহ বঙ্গের গোপচন্দ্র এর বংশধর সমাচারদেবের সমসাময়িক ছিলেন।

তাম্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেব বংশের বংশানুক্রমটি এরূপ (১) শ্রী শান্তিদেব (২) তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী শ্রী বীরদেব, (৩) বীরদেব ও তাঁর স্ত্রী সোমদেবী-র পুত্র ও উত্তরাধিকারী শ্রী আনন্দদেব এবং (৪) আনন্দদেব-এর পুত্র ও দেব বংশের শেষ স্বীকৃত রাজা শ্রী ভবদেব।

দ্বিতীয় অথবা কলকাতা তাম্রশাসনটি ময়নামতীর আনন্দবিহার হতে উদ্ধার করা হয়েছে। দেব বংশের বংশক্রম ছাড়াও এ তাম্রশাসনে রাজধানী শহর দেবপর্বতের একটি বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। পবিত্র নদী ক্ষীরোদা দেবপর্বতকে পরিখার মতো চারপাশ দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছিল। (এ নদীটিকে বর্তমানে গোমতী নদীর সাথে শনাক্ত করা হয়)। তথ্যসূত্রে রত্নত্রয়ের বেন্দমতী বিহারিকারও উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন লিপিবিজ্ঞান সূত্রে দেব তাম্রশাসনগুলিকে আট শতকের শেষ এবং নয় শতকের শুরুর দিকের বলে ধরা হয়।

মুদ্রা এবং সিল  ময়নামতীতে দেব শাসনামলের স্তর থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচশরও অধিক স্বর্ণ, রৌপ্য এবং সামান্য কিছু তাম্র মুদ্রা দেব বংশের অর্থনীতির সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত বাণিজ্যিক অবস্থার চমৎকার ধারণা দিলেও তাদের নিজেদের সম্প©র্ক তেমন কোনো তথ্য প্রদান করে না। এ সংগ্রহে ‘হরিকেল’ লেখা সম্বলিত (হরিকেল মুদ্রা নামে পরিচিত) আরাকানি রীতির পাতলা রৌপ্য মুদ্রার বিপুল আবিষ্কার হারিয়ে যাওয়া হরিকেল রাজ্যের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ময়নামতীতে খননের ফলে অগণিত পোড়ামাটির ফলক এবং মাটি ও পোড়ামাটির সিলিং পাওয়া গিয়েছে, যার অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মসূত্র সম্পর্কিত। এগুলির কোনো কোনোটির শুধু প্রাচীন লিপিতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে। তিন ছত্র বিশিষ্ট কয়েকটি পোড়ামাটির ফলকের ব্যাপারে কিন্তু একথা প্রযোজ্য নয়। এগুলিতে শালবন বিহারের আদিনাম এবং এর প্রতিষ্ঠাতার নাম খোদিত রয়েছে। এতে লেখা রয়েছে শ্রী-ভবদেব মহাবিহার আর্য-ভিক্ষুসংঘস্য (শ্রী-ভবদেব প্রতিষ্ঠিত মহাবিহারের স্থাপন সম্পর্কে)।

স্থাপত্য  দেবস্থাপত্য উদ্ভাসিত হয়েছে শালবন বিহার, আনন্দ বিহার ও ভোজ বিহারএর তিনটি বিশাল বৌদ্ধ স্থাপনা, কুটিলা মুড়ার বৃহৎ স্তূপ এবং ইটাখোলামুড়া ও রূপবান মুড়ার অসাধারাণ মন্দিরের মধ্যে। দেব বংশের রাজাগণ বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনটি বিশাল বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য (শালবন, আনন্দ ও ভোজ বিহার)। লক্ষণীয়ভাবে সম আকার, আকৃতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ সবকটি বিহারই বিশাল প্রতিরক্ষা প্রাচীর ও একটিমাত্র সুরক্ষিত প্রবেশদ্বারসহ নগরদুর্গের মতো চতুর্ভুজাকৃতির। এর মাঝে লক্ষণীয়ভাবে স্থাপিত ক্রুশাকার কেন্দ্রীয় মন্দির।

স্থাপত্য শিল্পে তর্কাতীতভাবেই দেব রাজাদের সর্বোচ্চ অর্জন হচ্ছে এ স্থাপনাগুলির কেন্দ্রে স্থাপিত ‘ক্রুশাকার বৌদ্ধ মন্দির’। স্পষ্টত এটি ইটাখোলা মুড়া ও রূপবান মুড়ার অর্ধ ক্রুশাকার মঠস্থাপত্য থেকে উৎসারিত। এধরনের বৌদ্ধস্থাপত্য ভারতে আর দেখা যায় না। শালবন বিহারে এ ধ্রুপদী স্থাপত্যের সম্পূর্ণ বিকাশ দেখা যায়। বর্তমানে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এটি শুধু পাহাড়পুর ও বিক্রমশীলা মহাবিহার এর পাল স্থাপত্যকেই প্রভাবিত করে নি, বরং প্রাচীন ব্রহ্মদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও এটি তার প্রভাব রেখেছিল।

ভাস্কর্য  প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর মধ্যে মৃতপাত্র ব্যতীত সর্বাধিক প্রাপ্ত দ্রব্য হলো ভাস্কর্য। ইটাখোলামুড়ার ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাপ্ত একটি মস্তকহীন মূর্তি ছাড়া ময়নামতী থেকে স্টাকো করা আর কোনো ভাস্কর্য পাওয়া যায় নি। প্রস্তর ভাস্কর্যও বেশ বিরল। স্লেটের ন্যায় কোমল ধূসর স্থানীয় মাটি ও নিম্নমানের বেলে পাথরের সীমিত সংখ্যক নমুনা পাওয়া গিয়েছে। তবে উন্নত শৈলী, কারিগরি দক্ষতা, দেহসৌষ্ঠবে ঐকতানিক মিশেল এবং সেই সাথে পারলৌকিক ও সহজ অভিব্যক্তির সমন্বয়ে পরিমার্জিত ভাব এটিকে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এ ধারার নমুনার মধ্যে রূপবান মুড়ায় প্রাপ্ত বেলে পাথরের অতিকায় বুদ্ধমূর্তিটির কথা উল্লেখ করতেই হয়। পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলে প্রাপ্ত অক্ষত বুদ্ধমূর্তির মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ ও সর্বোৎকৃষ্ট।

ময়নামতীতে সংগৃহীত ব্রোঞ্জদ্রব্যাদি বেশ সমৃদ্ধ ও যেকোনো মানেই অসাধারণ। এগুলির একটি বড় অংশই দেব শাসনামলের। দেড়’শ-এর অধিক অক্ষত অসাধারণ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলিতে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে আরাধনার দৃশ্য। তবে প্রমাণ আকারের বিশাল চিত্রও লক্ষ্য করা যায়। ময়নামতীর ব্রোঞ্জ সামগ্রী মূলত ধর্মীয় শিল্পচর্চাকেই উপস্থাপন করে। এখন পর্যন্ত ধর্ম বহির্ভূত সাধারণ কোনো ভাস্কর্য লক্ষ করা যায় নি। বৈচিত্র্যপূর্ণ, মূল্যবান ও অসাধারণ সমৃদ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে এসব মূর্তিতত্ত্বে। এগুলি ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধধর্মের ক্রমবিকাশের এক নির্ভরযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য প্রদান করছে। এগুলি সে যুগের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্রই তুলে ধরেছে যা অন্য কোনো কিছু থেকেই পাওয়া যায় না। এক দিকে প্রচলিত মহাযান ধর্ম থেকে তান্ত্রিক ধর্মে এর ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং উপমহাদেশেই এর ক্রম অবক্ষয়, অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পুনরায় এর বিস্ময়কর বিকাশ- সবকিছুই এসব ভাস্কর্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

পোড়ামাটির শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্রুশাকার মঠের ভিত্তিপ্রাচীরে বর্তমান পোড়ামাটির শিল্প ময়নামতীতে প্রায় এককভাবেই ভাস্কর্য ফলক দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে। এটি এখন তর্কাতীতভাবেই প্রতিষ্ঠিত যে, এ ভাস্কর্য শিল্প শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক যুগেরই এবং তা হলো দেব যুগের। এগুলি দেশিয় শৈলীরই প্রতিনিধিত্ব করছে যা বাংলার লোকশিল্পের ভিত্তি। স্পষ্টত এটি এযুগেরই এবং এখানেই উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা দেশ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। অপরিপক্ক, প্রতিফলনহীন ও হালকা মেজাজের শিল্পকর্ম বলা হলেও এগুলি অসাধারণ অভিব্যক্তিসম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত। এগুলির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো এর উৎকর্ষ ও বৈচিত্র্য, এর প্রাণবন্ত রূপ ও গতিময়তা। ভাস্কর্যগুলিতে বিষয়গত দিক প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলার সমাজজীবনের পাশাপাশি কল্পনাপ্রসূত অনেক কিছুই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

পোড়ামাটির ফলক ও এর প্যানেলে সজ্জিত খোদাইকৃত ও অলংকৃত ইট দেবযুগে এক অপ্রচলিত আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র শিল্পশৈলী সমৃদ্ধ করেছে। আর এ ভাস্কর্যগুলিতেই প্রাচীন বঙ্গ-সমতট তার পরিপূর্ণ ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ ঘটিয়েছে।
by Earnings : 7.67 Usd (6,719 points)

Related questions

-- Payment Method & Thresholds--Referral Program--Help--
-- FAQ --- Terms --DMCA ---Contact Us --
Language Version--English --Bengali ---Hindi ---
...