ইয়েমেনের বানিজ্যিক রাজধানীর নাম এডেন।
বাব এল মান্দেব প্রণালির প্রায় ১৭০ কিমি (১১০ মা) পূর্ব দিকে লোহিত সাগরের পূর্ব প্রান্তের অ্যাডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত ইয়েমেনের একটি শহর। ২০১৫ সাল থেকে শহরটি ইয়েমেনের অস্থায়ী রাজধানী। এর জনসংখ্যা প্রায় ৮,০০,০০ জন। অ্যাডেনের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়টি একটি একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে অবস্থিত। এটি এখন একটি উপদ্বীপ তৈরি করেছে, যা একটি সংকীর্ণ সংযোজক ভূখণ্ড দ্বারা মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম থেকে ৭ম শতাব্দীর মধ্যে প্রাচীন আওসান রাজ্য এই পোতাশ্রয়টি ব্যবহার শুরু করে। আধুনিক বন্দর উপদ্বীপের অন্যদিকে অবস্থিত। অ্যাডেন এটির নাম গালফ অব অ্যাডেন বা অ্যাডেন উপসাগর প্রদান করে। অ্যাডেন কয়েকটি স্বতন্ত্র উপকেন্দ্র নিয়ে গঠিত: ক্রেটার, মূল বন্দর শহর; মাআল্লা, আধুনিক বন্দর; ঔপনিবেশিক আমলে "স্টিমার পয়েন্ট" নামে পরিচিত তাওয়াহি; এবং গোল্ড মোহুর রিসোর্টসমূহ।
খোরমাকসার জেলা অ্যাডেনকে মূল ভূখণ্ডের সাথে সঠিকভাবে সংযুক্ত করেছে। এ জেলায় রয়েছে শহরের কূটনৈতিক মিশন, অ্যাডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয় ও অ্যাডেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সাবেক ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স স্টেশন আরএএফ খোরমাকসার) এবং ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর।
মূল ভূখণ্ডে শেখ ওসমানের প্রাক্তন ওসিস অঞ্চল; আল-মনসুরা (এই শহরটি ব্রিটিশদের দ্বারা পরিকল্পিত); এবং মদিনাত আশ-শাব (পূর্বে মদিনাত আল-ইতিহাদ), দক্ষিণ আরবীয় ফেডারেশনের রাজধানী হিসেবে মনোনীত স্থান এবং বর্তমানে অ্যাডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃহত শক্তি / নির্ধারণকরণ সুবিধা এবং অতিরিক্ত অনুষদ রয়েছে।
অ্যাডেন একটি বিস্তৃত প্রাকৃতিক বন্দরের পূর্ব দিকটি ঘিরে রেখেছে, যা আধুনিক বন্দর নিয়ে গঠিত। এই শহরটি বেশ বড়, হলেও এখানে তেমন কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। তবে অ্যাডেনে "অ্যাডেন ট্যাঙ্কস" নামক জলাধার রয়েছে। এই জলাধারগুলোতে নগরীর বাসিন্দাদের স্বাদু-পানির একমাত্র সংস্থান হিসেবে বৃষ্টির পানি জমা করা হয়। স্থানীয় সম্পদশালী বণিক এবং বাণিজ্যের জন্য আগত ভারতীয় জাহাজগুলোর কারণে শহরটি সমৃদ্ধি লাভ করে।[১] লিটল অ্যাডেনের আগ্নেয় উপদ্বীপটি পশ্চিমে পোতাশ্রয় ও বন্দরটি ঘিরে একটি অনেকটা বিপ্রতীপ পার্শ্বচিত্র (মিরর ইমেজ) তৈরি করে। ঔপনিবেশিক আমলে লিটল অ্যাডেন তেল শোধনাগার এবং ট্যাঙ্কার বন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালে ইয়েমেনি সরকারের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে হস্তান্তরিত করার আগপর্যন্ত দুটোই ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছিল।
১৯৯০ সালে ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্রের সাথে দেশটির একীকরণ হওয়া অবধি অ্যাডেন জন-গণতান্ত্রিক ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ছিল। তারপর ইয়েমেনের হুথি অধিগ্রহণের পরে রাষ্ট্রপতি আব্দরাব্বুহ মনসুর হাদি হুথি নিয়ন্ত্রাধীন সানা থেকে পালিয়ে এলে আডেন আবার সংক্ষিপ্তভাবে ইয়েমেনের অস্থায়ী রাজধানী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে।[২] ২০১৫ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত, প্রেসিডেন্ট হাদির সরকারি বাহিনী এবং হুথিদের মধ্যে আডেনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শহরে তখন পানি, খাদ্য এবং চিকিৎসা সরবরাহ কম ছিল।[৩] ১৪ ই জুলাইয়ে সৌদি সেনাবাহিনী ইয়েমেনি সরকারের পক্ষে অ্যাডেনকে হুথি মুক্ত করতে আক্রমণ শুরু করে। তিন দিনের মধ্যে হুথিদের শহর থেকে বিতারণ করা হয়।[৪] ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাডেন সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের দখলে আছে। আব্দরাব্বুহ মনসুর হাদি সরকার কর্তৃক বরখাস্ত হওয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালফি-ধর্মীয় নেতা হানী বিন বুড়িকের সাথে মিলে অ্যাডেনের সাবেক মেয়র আইদরোস আলজুবাইদী দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিল গঠন করে।